Terms of use dolor sit amet consectetur, adipisicing elit. Recusandae provident ullam aperiam quo ad non corrupti sit vel quam repellat ipsa quod sed, repellendus adipisci, ducimus ea modi odio assumenda.
Disclaimers
Lorem ipsum dolor sit amet consectetur adipisicing elit. Sequi, cum esse possimus officiis amet ea voluptatibus libero! Dolorum assumenda esse, deserunt ipsum ad iusto! Praesentium error nobis tenetur at, quis nostrum facere excepturi architecto totam.
Lorem ipsum dolor sit amet consectetur adipisicing elit. Inventore, soluta alias eaque modi ipsum sint iusto fugiat vero velit rerum.
Limitation on Liability
Sequi, cum esse possimus officiis amet ea voluptatibus libero! Dolorum assumenda esse, deserunt ipsum ad iusto! Praesentium error nobis tenetur at, quis nostrum facere excepturi architecto totam.
Lorem ipsum dolor sit amet consectetur adipisicing elit. Inventore, soluta alias eaque modi ipsum sint iusto fugiat vero velit rerum.
Copyright Policy
Dolor sit amet consectetur adipisicing elit. Sequi, cum esse possimus officiis amet ea voluptatibus libero! Dolorum assumenda esse, deserunt ipsum ad iusto! Praesentium error nobis tenetur at, quis nostrum facere excepturi architecto totam.
Lorem ipsum dolor sit amet consectetur adipisicing elit. Inventore, soluta alias eaque modi ipsum sint iusto fugiat vero velit rerum.
General
Sit amet consectetur adipisicing elit. Sequi, cum esse possimus officiis amet ea voluptatibus libero! Dolorum assumenda esse, deserunt ipsum ad iusto! Praesentium error nobis tenetur at, quis nostrum facere excepturi architecto totam.
Lorem ipsum dolor sit amet consectetur adipisicing elit. Inventore, soluta alias eaque modi ipsum sint iusto fugiat vero velit rerum.
We use cookies to ensure you get the best experience on our website. By continuing to use our site, you accept our use of cookies, Privacy Policy, and Terms of Service.
নদিয়ার হৃদয়ে, কৃষ্ণনগরের দেড়শতাধিক
বছরের ইতিহাস কাঁধে নিয়ে উন্নত শিরে নীরবে দাঁড়িয়ে আছে এক
প্রতিষ্ঠান যার নামকৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী। এটি শুধু যে কিছু জরাজীর্ণ পুস্তকেরআবাস তেমনটা নয় বরং এটি বাংলার শতাব্দী প্রাচীন প্রজ্ঞা,ঐতিহ্য এবং
আত্মপরিচয়ের এক নিবিড় অভিসন্ধান। ১৮৫৬ সালে যখন ভারতবর্ষ ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনের
বেড়াজালে আবদ্ধ,
প্রথম স্বাধীনতার লড়াই অর্থাৎ মহাবিদ্রোহের এক বছর আগে এই
লাইব্রেরির জন্ম যেন আগামীর এক আলোকবর্তিকার মতো। সে সময় একদিকে ছিল
শিক্ষার সীমাবদ্ধতা,
অন্যদিকে ছিল বাঙালি মননের জাগরণের তীব্র আর্তি।
এই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ঠিক দশ বছর আগেই মাথা তুলেছে নদিয়া জেলা তথা বাংলার
শিক্ষা জগতের আরও দুই উন্নত স্তম্ভ - কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল ও কৃষ্ণনগর সরকারী
মহাবিদ্যালয়। কৃষ্ণনগরের
এহেন এক উত্তুঙ্গ শিক্ষা বিপ্লবের সময়ে কিছু স্থানীয় বুদ্ধিজীবী ও
সমাজসেবী ভেবেছিলেন—জ্ঞানকে আরও
মুক্ত করার কথা, ভেবেছিলেনশিক্ষাকে শিক্ষায়তনের গণ্ডীর
বাইরে এনে ফেলার কথা। এই গ্রন্থাগারটি মূলত তাদেরই উদ্যোগে গড়ে ওঠে । এটি প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার প্রসার এবং
সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি। সেই সময়ে, যখন শিক্ষার সুযোগ সীমিত ছিল, এই লাইব্রেরীটি
সর্বসাধারণের জন্য জ্ঞানের আলোকবর্তিকা হিসেবে
আবির্ভূত হয়।
সময়
বদলেছে, কিন্তু
এই গ্রন্থাগারের উদ্দেশ্য একেবারেই বদলায়নি। আজও
এখানে সাহিত্য,
ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম, শিল্পকলা, এবং আরও
নানা বিষয়ে রয়েছে হাজার হাজার বই। পুরোনো দিনের বিরল পুঁথি আর পাণ্ডুলিপি আজও
রক্ষিত আছে, যা
গবেষক ও ইতিহাসানুরাগীদের জন্য অমূল্য সম্পদ। এই সংগ্রহশালায় শুধু বই নয়, রয়েছে
পত্রিকা, সাময়িকী
এবং আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন পুস্তকের ডিজিটাল সংস্করণও। শিশু থেকে বৃদ্ধ, শিক্ষার্থী থেকে শিক্ষানুরাগী—সব বয়স, সব শ্রেণির পাঠকদের জন্যই এখানে
উন্মুক্ত আছে বিবিধ জ্ঞানের ভাণ্ডার।
এই গ্রন্থাগার শুধু যেপুস্তক-প্রেমীদের গন্তব্য এমন বললে ভুল হবে, এটি আসলে বৃহদার্থে কৃষ্ণনগরের সাংস্কৃতিক
প্রাণকেন্দ্র। বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে আয়োজন করা হয় জেলা বইমেলা, আলোচনা সভা, কবিতাপাঠ, বই প্রকাশ, সেমিনার,
ডিবেট, শিল্প মেলা ইত্যাদি একাধিক ইভেন্ট। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, বীর
বিপ্লবী বাঘা যতীন, স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রণী নেতা মাষ্টারদা
সূর্য সেন, বিশিষ্ট
কবি ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত
বাংলার ক্ষণজন্মা মনিষীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে বিভিন্ন
অনুষ্ঠান আয়োজন করা এখানকার রেওয়াজ। তবে এই আয়োজনগুলো নিছকই অতীতের স্মরণ নয়, বরং বর্তমানকে সচেতন করে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা
দেয়।
আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে এই লাইব্রেরি নিজেকে
আধুনিক রূপে প্রস্তুত করেছে। ই-বুক, ডিজিটাল
ক্যাটালগিং, কম্পিউটারাইজড
সার্ভিস চালু হয়েছে পাঠকদের সুবিধার্থে। শিশুদের জন্য আলাদা পাঠকক্ষ আছে। এখানে
প্রায়শই বিভিন্ন শিক্ষামূলক
কর্মশালার আয়োজন করা হয়, যাতে নতুন প্রজন্ম বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে। সাময়িক ও ক্ষুদ্র পত্রপত্রিকা তো রয়েছেই, সদস্যদের জন্য রয়েছে পাঠকক্ষে বসে বই পড়া
ছাড়াও বই ধার নেওয়ার সুযোগ, যা এই শহরের বহু মানুষের কাছে এক
মূল্যবান পরিষেবা। এছাড়াও সাম্প্রতিক কালে গ্রন্থাগারের দ্বিতীয়
তলটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি রিসার্চ
লাইব্রেরী। বিশিষ্ট প্রাক্তন অধ্যাপক প্রবাসী কাঞ্চন সরকারের পরিবারের উদ্যোগে নির্মিত এই
লাইব্রেরী বিভিন্ন দুর্লভ পুস্তকের সম্ভার উন্মুক্ত করেছে গবেষকদের কাছে।
কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী শুধু শহরের নয়, আশপাশের গ্রামের
মানুষের কাছেও একটি নির্ভরযোগ্য শিক্ষাকেন্দ্র। যারা স্কুল-কলেজে নিয়মিত যেতে পারেন না,
যাদের পক্ষে দামি বই কেনা সম্ভবপর নয়—তাদের কাছে
এই লাইব্রেরি প্রকৃত অর্থে এক নিবিড় সাহচর্য। এটি একদিকে
যেমন পাঠককে জ্ঞানজগতের সঙ্গে সংযোগ ঘটায়, অন্যদিকে তেমনই সমাজে এক ধরণের সাম্য আনে—জ্ঞানচর্চা, অনুসন্ধিৎসা ও শিক্ষার
অধিকারকে গণমানুষের নাগালে পৌঁছে দেয় ।
এই গ্রন্থাগার আসলে এক জীবন্ত ঐতিহ্যঅথবা এক নীরব আন্দোলন, যা যুগে যুগে আলো ছড়িয়ে চলেছে অশিক্ষার পিচ্ছিল অন্ধকারের গায়ে। এটি শুধু বইয়ের সংগ্রহশালা নয় বরং নদিয়া জেলার সুপ্রাচিন ইতিহাসের সাক্ষী। যারা এখানে এসে বইয়ের পাতা ওল্টান, তারা শুধু তথ্য খোঁজেন না—তারা তাড়া নিজের ভিতর গড়ে তোলে এক গভীর বোধ, এক সুদৃঢ় চিন্তার ভিত যা তার অগ্রগতির শরিক।
কৃষ্ণনগর পাবলিক লাইব্রেরী নদিয়ার সাংস্কৃতিক মানচিত্রে এক অবিচ্ছেদ্য নাম, এক দীপ্ত সমাপ্তিহীন যাত্রা, যা শহর তথা জেলার অজস্র মানুষের হৃদয়ে চিরভাস্বরহয়ে রয়ে যাবে যাবে।